ঢাকা, বুধবার   ০৯ জুলাই ২০২৫

‘জয় বাংলা বধ্যভূমি’ দখলে নিয়েছে ভূমিহীন চা শ্রমিকরা 

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২৩:৩৯, ২৪ জানুয়ারি ২০২২

Ekushey Television Ltd.

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সিন্দুরখান বাজার সংলগ্ন ‘জয় বাংলা বধ্যভূমি’ দখলে নিয়েছে উপজেলার সিন্দুরখান-রাজঘাট চা বাগানের ভূমিহীন চাশ্রমিকেরা। সোমবার সকালে রাজঘাট ইউনিয়নের সিন্দুরখান বাজার সংলগ্ন ‘জয় বাংলা বধ্যভূমিতে’ শতাধিক চা শ্রমিক একত্রে দখল নিতে আসেন। এ সময় তারা বধ্যভূমিতে একটি ব্যানার টাঙ্গান।

এদিকে বধ্যভুমির জমি দখলের সংবাদ পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশসহ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. নেছার উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আপত্তি দিলে কিছুক্ষণের জন্য তারা কাজ বন্ধ করে। প্রশাসন চলে আসার পর দুপুর থেকে তারা আবারও তা দখলে যায়।

সরজমিনে দেখা যায়, জয় বাংলা বধ্যভূমিতে ঘর নির্মাণের জন্য তারা এর মাটির নিচ থেকে বাঁশের মোড়া বা শেকড় উত্তোলন করছে। অনেকে অন্যপাশ থেকে মাটি এনে ভিট তৈরির কাজ করছে। কেউ ঘর তৈরির জন্য বাঁশ কাটছেন।

এ সময় সিন্দুরখান চা বাগানের লিটন নায়েক জানান, এটি চা বাগানের জমি এখানে বাঁশ বরন্ডি ছিল। আমাদের বাসস্থানের সংকট তাই আমরা এই জায়গা দখল করে আমাদের বাসস্থান তৈরি করছি।

সিন্দুরখান চা বগানের সরদার পরিতোষ বুনার্জী জানান, বাগান কর্তৃপক্ষকে বার বার বলার পরও তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে না। এক ঘরে বাবা-মা, নিজে নিজের স্ত্রী ভাই-ভায়ের স্ত্রী, ছেলে-ছেলের স্ত্রীসহ বসবাস করছেন। নিরুপায় হয়ে তারা এই জায়গা দখল করে বাড়ি তৈরি করছেন।  

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কুমুদ রঞ্জন দেব জানান, খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। আপত্তি দেয়ার পরও তারা বধ্যভুমিতে কাজ করছে। প্রশাসনের বাঁধাও তারা মানেনি। তিনি জানান, বধ্যভূমিতে সরকারী অর্থায়নে স্মৃতিস্থম্ভ নির্মানের কাজ শরু হয়েছে। কোন একটি চক্র এর পেছনে রয়েছে। সাধারণ শ্রমিকদের দিয়ে এ চক্র বধ্যভূমির জমি দখল করাচ্ছে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিময় জায়গাটি রক্ষার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। 

সিন্ধুরখানের প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা ডা. রতিকান্ত রায় জানান, ১৯৭১ সালে এই জায়গাটি ছিলো বিশাল বাঁশ বরন্ডি। নির্জন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় এই জায়গাটিকে মুক্তিকামী ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার জন্য বেঁচে নেয় পাক-বাহিনী। তিনি জানান, পাক-বাহিনী ও দেশীয় রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের ধরে নিয়ে মুক্তিবাহিনীর তথ্য চাইতো। তথ্য না হলে বড় অফিসার বলতো এদের জয় বাংলামে বেঁচ দেও।  অর্থাৎ জয় বাংলায় বিক্রি করে দাও। তখন এই বাঁশ বরন্ডিতে নিয়ে তাদের হত্যার পর ছোট ছোট গর্ত করে লাশ পুঁতে রাখতো। পরবর্তীতে এই বধ্যভূমির নামকরণ করা হয় জয় বাংলা বধ্যভূমি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রিপন রায় জানান, এই জায়গাটি আগেও ফিনলে টি কোম্পনী তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এখানে প্লান্টেশন করতে চেয়েছিল। বুলডোজার চালিয়ে তখনই বাঁশ বরন্ডি, বাঁশঝাড় উপড়ে ফেলেছিল। স্থানীয় বাসিন্দা, মুক্তিযোদ্ধা ও গণমাধ্যমকর্মীদের চাপে তারা সেবার সরে যায়।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বাসস্থান সংকট হলে সেটা বাগান কর্তৃপক্ষ দেখবে। বধ্যভুমির জায়গা করো দখল করার সুযোগ নেই। এ ব্যপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেআই//
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি